এক নজরে উপপরিচালক, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ এর কার্যক্রম :
ভূমিকা :
জাতীয় উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নারীদের সম্পৃক্তকরণ ও নারীর সার্বিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সুষম উন্নয়নের একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত। এ উপলব্ধি থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করন ও স্বাধীনতা যুদ্ধে নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত নারী সমাজের পূনর্বাসনের জন্য ১৯৭২ সানের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পূনর্বাসন বোর্ড গঠন করেন।
পরবর্তীতে ১৯৭৪ সানে জাতীয় সংসদে আইন পাশের মাধ্যমে নারী পূনর্বাসন বোর্ডকে বাংলাদেশ নারী পূনর্বাসন কল্যাণ ফাউন্ডেশনে রূপান্তরিত করা হয়। যা বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর নারী উন্নয়নে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছে।
তাই আজ আমরা সারা বাংলাদেশের নারী জাতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
আমাদের কার্যক্রম :
ভিজিডি :
উপপরিচালকের কার্যালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কর্তৃক দুঃস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট) ভিজিডি কর্মসূচির পরিচালিত হয়। হবিগঞ্জ জেলার মোট ৭৮ টি ইউনিয়নে বর্তমানে ১৭,২১৭ জন নির্বাচিত উপকারভোগী রয়েছে। উপকারভোগীদের দুই বছর পর্যন্ত প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে প্যাকেটজাত বস্তায় গম/চাল দেয়া হয়। এছাড়াও উপকারভোগী মহিলাদেরকে এনজিও মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
মাতৃত্বকাল ভাতা :
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কর্তৃক দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকাল ভাতা প্রদান কর্মসূচি পরিচালিত হয় । এই কর্মসূচির আওতায় হবিগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলার ৭৮ টি ইউনিয়নে মোট মোট ভাতাভোগীর সংখ্যা ১১০২১ জন। প্রত্যেক উপকারভোগীকে প্রতি মাসে ৮০০ টাকা হারে ৩ বছর পযন্ত ভাতা প্রদান করা হয়। EFT অর্থ্যাৎ G2P পদ্ধতির মাধ্যমে ভাতাভোগিদের অর্থ মন্ত্রণালয় হতে সরাসরি ভাতা পরিশোধের জন্য নিজস্ব অনলাইন ব্যাংক হিসাব, বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, একাউন্টের মাধ্যমে ভাতা টাকা প্রেরণ করা হয়ে থাকে। এছাড়া উপকারভোগীদের বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল কর্মসূচি :
উপপরিচালকের কার্যালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কর্তৃক পৌরএলাকার কর্মজীবি দরিদ্র, দুঃস্থ দুদ্ধপোষ্য মায়েদের ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা কর্মসূচির পরিচালিত হয়। এই কর্মসূচির আওতায় হবিগঞ্জ জেলার ৬টি পৌরসভায় মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ৩১৭১ জন। প্রত্যেক উপকারভোগীকে প্রতি মাসে ৮০০ টাকা হারে ৩ বছর পযন্ত ভাতা প্রদান করা হয়। EFT মাধ্যমে ভাতাভোগীদের স্ব-স্ব একাউন্টে টাকা প্রেরণ করা হয়ে থাকে। এছাড়া উপকারভোগীদের বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। উপকারভোগী মা তাদের শিশুদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়ে হেলথ ক্যাম্পের মাধ্যমে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে ।
জীবিকায়নের জন্য মহিলাদের দক্ষতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি :
উপপরিচালকের কার্যালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কর্তৃক জীবিকায়নের জন্য দক্ষতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় দুঃস্থ, অসহায় বেকার যুব মহিলা, তালাকপ্রাপ্তা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ০৩ (তিন) মাস মেয়াদি ০৫ (পাঁচ) টি ট্রেডে (প্রতি ট্রেডে ২০ (বিশ) জন করে মোট ১০০ জনকে প্রতি ট্রেডের জন্য আলাদা-আলাদা দক্ষ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় (এই কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতি বছর ৪০০ জন কে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়)। প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে ১০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়।
WTC (উইমেন ট্রেনিং সেন্টার) প্রশিক্ষণ কর্মসূচি :
এ কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে ১১৩টি উপজেলায় এ কর্মসূচি চলমান আছে। হবিগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ২টি উপজেলায় যথাক্রমে নবীগঞ্জ ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় কার্যক্রম চলমান আছে। ৩ মাস মেয়াদে শুধুমাত্র ৩০ জন মহিলাকে সেলাই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এর জন্য প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে ১০০ টাকা করে ভাতা দেয়া হয়।
উপজেলা পর্যায়ে আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ (আইজিএ) প্রকল্প :
উপজেলা পর্যায়ে আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ (আইজিএ) প্রকল্পের আওতায় হবিগঞ্জ জেলার ০৭ টি উপজেলায় ০২ টি করে ট্রেড নির্বাচন পূর্বক ৩ মাস মেয়াদে ৩০ জন করে ৬০ জন মহিলাকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশিক্ষণকালীন সময় প্রশিক্ষণ ভাতা বাবদ দৈনিক ২০০/- বরাদ্দ প্রাপ্তি স্বাপেক্ষে ভাতা প্রদান করা হয়।
কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্প :
এই প্রকল্পের আওতায় জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও ৬টি পৌরসভাসহ ৮৪টি ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ক্লাবে ১০জন কিশোর ও ২০জন কিশোরকে আবৃত্তি ও সংগীত বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এসব কিশোর-কিশোরীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করার জন্য ফিল্ড সুপারভাইজার, জেন্ডার প্রমোটার এবং আবৃত্তি ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
নারী ও শিশূ নির্যাতন প্রতিরোধ :
জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতির সহায়তায় স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, যৌতুক ও নারী শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ করা হয় এবং সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কমিউনিটি ও উঠান বৈঠক করা, নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধ এবং যৌতুক ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ সংক্রান্ত সভা সেমিনার নিয়মিত করা হয়।
বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা প্রদান :
লিগ্যাল এইড এর মাধ্যমে নির্যাতিত দুঃস্থ মহিলাদের বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। এবং বিজ্ঞ আদালত হতে তদন্তের জন্য প্রেরিতব্য নারী ও শিশু নির্যাতন ও যৌতুকের জন্য নির্যাতন ও বাল্য বিবাহসহ অন্যান্য মামলা তদমত্ম পূর্বক বিজ্ঞ আদালত বরাবরে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয় এবং নির্যাতিত মহিলা/ নারীকে সিলেট মহিলা সহায়তা কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়।
স্বেচছাসেবী মহিলা সংগঠন :
উপপরিচালকের কার্যালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কর্তৃক ১৯৬১ সালের মহিলা স্বেচছাসেবী সমাজ কল্যাণ সংস্থাসমূহ (রেজিষ্ট্রিকরণ ও নিয়ন্ত্রন) অধ্যাদেশ (১৯৬১ সালের ৪৬ নং অধ্যাদেশ ) এর বিধানাবলী মোতাবেক হবিগঞ্জ জেলার আটটি উপজেলা মোট ১৭৬ টি স্বেচছাসেবী মহিলা সমিতির নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সক্রিয় সমিতির ৯১ টি এবং নিক্রীয় সমিতির রয়েছে ৮৫ টি। সক্রিয় সমিতি সমূহকে প্রতি বছর বাংলাদেশ মহিলা কল্যাণ পরিষদ হতে এককালীন সাধারণ/বিশেষ ও স্বেচছাধীন অনুদান প্রদান করা হয়।
মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র্ঋণ কর্মসূচি :
এই কর্মসূচির মাধ্যমে নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নারী উদ্যোক্তা, ভিজিডি উপকারভোগী মহিলা ও স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সংগঠনের মহিলাদের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করা হয়। এ পর্যন্ত জেলায় মোট ২৭৯৭ জন মহিলার মধ্যে ২,০৩৯,৬,১৫০ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস